ঢাকা,শনিবার, ৪ মে ২০২৪

টেন্ডারে অনিয়মের অভিযোগ

চকরিয়া সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকের দায়িত্ব অবহেলার কারণে ফোরকানুল ইসলাম (৩৫) নামের এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ডাক্তার শোভন দত্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে হাসপাতালের পথ্য বা খাদ্য সরবরাহের টেন্ডার আহবানে ব্যাপক অনিয়ম ও হাসপাতালের বিভিন্ন পদে নিয়োগ বাণিজ্যে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে। শনিবার রাতে চকরিয়া থানা সেন্টারে নিজের অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন চকরিয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কাউছার উদ্দিন কছির।

সংবাদ সম্মেলনে চকরিয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কাউছার উদ্দিন কছির বলেন, ডা.শোভন দত্ত চকরিয়া উপজেলা সরকারি হাসপাতালের টিএইচও পদে যোগদানের পর কিছুসময় ঠিকঠাক থাকলেও এখন তিনি সব খাত থেকে উপরি হাতিয়ে নিচ্ছেন। এইধরনের ঘটনার আদোপান্ত হাসপাতালের সংশিষ্টরা আমাদের জানাচ্ছে। স্থানীয় সাংবাদিক অনেকেও অবগত আছেন।

তিনি আরও বলেন, আমার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তিনটি অর্থবছরে হাসপাতালের পথ্য সরবরাহ খাতের ঠিকাদার হিসেবে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করেছেন। কোনদিন অসঙ্গতি ঘটেনি হাসপাতালে।
কার্যাদেশের শর্তাবলী অনুযায়ী আমার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা হাসপাতালের নিয়মিত রোগীর পাশাপাশি করোনাকালীণ সময়ে রোগীদের মাঝে সুচিকিৎসা নিশ্চিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পথ্য বা খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ করেছেন।

ভুক্তভোগী ঠিকাদার কাউছার উদ্দিন কছির বলেন, গেল তিন অর্থবছরে আমি চকরিয়া উপজেলা সরকারি হাসপাতাল কতৃপক্ষ থেকে প্রায় ২৬ লাখ টাকা বকেয়া বিল পাওনা আছি। হাসপাতালের টিএইচও ডা.শোভন দত্তের কাছে আমি বিষয়টি নিয়ে বারংবার ধর্ণা দিলেও তিনি আমার পাওনা ২৬ লাখ টাকার বিল পরিশোধে অস্বীকৃতি জানান। উল্টো বলে ঢাকা থেকে টাকা না আসলে বিল কীভাবে দেবো।

চকরিয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কাউছার উদ্দিন কছির বলেন, আমার পাওনা বিলের ২৬ লাখ টাকা পরিশোধ না করে নতুন অর্থবছরে যাতে হাসপাতালের পথ্য বা খাদ্য সরবরাহের টেন্ডার আহবান করা না হয়, সেইজন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ চেয়ে ২০২২ সালের ২৯ অক্টোবর হাইকোর্টে (উচ্চ আদালতে) একটি রিট মামলা (নং ১৩৬১৫) দায়ের করি। এরই প্রেক্ষিতে ১১ ডিসেম্বর মামলার শুনানি শেষে আদালতের বিজ্ঞ বিচারপতি আর্জিতে উপস্থাপিত অভিযোগের উপর রুল জারি করে বিষয়টি তিনমাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হাসপাতাল কতৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছেন।

কাউছার উদ্দিন কছির অভিযোগ করে বলেন, বিজ্ঞ হাইকোর্ট বিষয়টি তিনমাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বললেও চকরিয়া সরকারি হাসপাতালের টিএইচও ডা. শোভন দত্ত তা অমান্য করে ইতোমধ্যে হাসপাতালের নতুন অর্থবছরের খাদ্য সরবরাহের টেন্ডার কার্যক্রম শেষ করে পছন্দের ঠিকাদার নিয়োগ দিয়েছেন। তার নজিরবিহীন টেন্ডার কারচুপির কারণে ফরম ক্রয় করেও ৯ জন ঠিকাদার হাসপাতালের টেন্ডারে অংশ নিতে পারেনি।

এই অবস্থায় চকরিয়া উপজেলা সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের দায়িত্ব অবহেলা, টেন্ডারে অনিয়ম-দুর্ণীতি, হাসপাতালের বিভিন্ন পদে নিয়োগ বানিজ্যসহ সব অভিযোগ নিয়ে ইতোমধ্যে ভুক্তভোগীরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সহ স্বাস্থ্য প্রশাসনের বিভিন্ন উর্ধবতন কতৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন বলে জানান উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কাউছার উদ্দিন কছির।

সম্প্রতি চকরিয়া উপজেলা সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকের দায়িত্ব অবহেলায় মারা যান চকরিয়া পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ব্যবসায়ী ফোরকানুল ইসলাম।

নিহতের ভাই এমরানুল ইসলাম বলেন, আমার ভাইয়ের অকালে মৃত্যুর জন্য চকরিয়া উপজেলা হাসপাতালের টিএইচও ডাক্তার শোভন দত্তের অধিনস্থ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও নার্স দায়ী। তাদের চিকিৎসা অবহেলার কারণে আমার ভাই মারা গেছেন। সব ডকুমেন্টস হাতে আছে।

এমরানুল ইসলাম বলেন, দায়িত্ব অবহেলা ও বিনা চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় আমি জড়িতদের বিরুদ্ধে গত ১১মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছি।

লিখিত অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন , আমার বড় ভাই ফোরকানুল ইসলামকে পেটের ব্যাথা নিয়ে গতমাসের ৫ তারিখ চকরিয়া সরকারি হাসপাতালের ৩৫ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। টানা তিনদিন তাকে হাসপাতাল বেডে রেখে দিলেও কর্তব্যরত চিকিৎসক কিংবা নার্সরা রোগীর শারীরিক অবস্থা কোনপর্যায়ে আছে তা আমাদের জানাতে পারেনি।
এরই মধ্যে তাদের চিকিৎসার অবহেলায় রোগী অনেকটা শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়লে ৭ মে তারিখ তাকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানের কর্মরত চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি আমার বড়ভাই এ্যাপাডেসাইটিস ভার্ষ্ট হয়ে মারা গেছেন। সেইদিন কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকরা আমাদের জানায়, সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হওয়ায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
সাংবাদিকদের সামনে কেঁদে কেঁদে বড়ভাই ফোরকানুল ইসলামের অকাল মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসা অবহেলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানান ছোটভাই এমরানুল ইসলাম।

পাঠকের মতামত: